প্রশ্রাবের রাস্তা চিকন হয়ে যাওয়া (OIU)
ইউরেথ্রা অস্বাভাবিক সরু হয়ে গেলে তাকে ইউরেথ্রা সরু রোগ বা ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার বলা হয়। মূত্রথলি থেকে প্রস্রাব নির্গমনের ক্ষেত্রে যে রোগগুলো বাধার সৃষ্টি করে এটি তার মধ্যে অন্যতম।
সচেতনতা ও উন্নত যন্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে বর্তমানে এ রোগ নির্ণয় সহজ হয়েছে। পুরুষ ও মহিলা উভয়েই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।মহিলা থেকে পুরুষই এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন।
ইউরেথ্রার স্ট্রিকচারের কারণ
আঘাতজনিত
* সড়ক দুর্ঘটনায় আঘাতজনিত কারণেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। আঘাতে শ্রোণিচক্রের অস্থিগুলো ভেঙে গেলে অথবা দুই ঊরুর সন্ধিস্থলে এ আঘাতের ফলে ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার হয়।
* গাছ থেকে পড়ে যাওয়া, নৌকার কার্নিশে পড়ে যাওয়া, রিকশা, ঠেলাগাড়ির সঙ্গে অ্যাক্সিডেন্টও অন্যতম কারণ।যার মাধ্যমে পায়খানার রাস্তা ও প্রস্রাবের রাস্তার মাঝখানের অংশে আঘাত পায়।
চিকিৎসাজনিত
* বর্তমানে ইউরেথ্রা দিয়ে যন্ত্র প্রবেশ করিয়ে প্রস্টেট সার্জারি, মূত্রথলির ক্যান্সার ও আরো অনেক ধরনের চিকিৎসা করা হয়। পরবর্তী সময় এই যন্ত্র প্রবেশের কারণেও এ রোগ দেখা যেতে পারে।
* দীর্ঘদিন ক্যাথেটার ব্যবহারের জন্যও এই রোগ হতে পারে।একে ইসকেমিক স্ট্রিকচার বলা হয়। দীর্ঘ চিকিৎসার ক্ষেত্রে (যেমন- কার্ডিয়াক সার্জারি, নিউরোসার্জারি), বেশি মোটা ক্যাথেটার ব্যবহার করলে মহিলাদের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় প্রসববেদনা হলেও এ রোগ দেখা যেতে পারে।
ক্যান্সারজনিত
* মূত্রনালিতে বা এর আশপাশে কোনো ক্যান্সার হলে মূত্রনালিতে এ রোগ হতে পারে।
প্রদাহজনিত
* গনকক্বাল ইনফেকশন বা গনোরিয়া রোগ এই স্ট্রিকচারের অন্যতম কারণ। উন্নত বিশ্বে কম হলেও আমাদের দেশে এই কারণ কম নয়।এ ছাড়া অন্যান্য ইনফেকশনের জন্যও এ রোগ হতে পারে।
কিভাবে এ রোগের সৃষ্টি হয়?
উলি্লখিত কারণগুলোর জন্য প্রথমে মূত্রপথের আবরণ নষ্ট হয় এবং প্রস্রাব মূত্রপথ থেকে চারপাশের স্পঞ্জি টিস্যুতে ঢুকে পড়ে। প্রদাহের কারণে নরম টিস্যু বা স্পঞ্জি টিস্যুগুলো চেপে যায় এবং ইউরেথ্রা অস্বাভাবিক সরু করে ফেলে।
শ্রোণিচক্রের আঘাতে মূত্রনালি বা ইউরেথ্রার পেছনের অংশ প্রস্টেট গ্ল্যান্ড থেকে ছিঁড়ে যায়। এর ফলে জটিল স্ট্রিকচারের সৃষ্টি হয়।
রোগ নির্ণয়
* সঠিক ইতিহাস
* যথাযথ শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা
* আল্ট্রাসনোগ্রাম
* ইউরোফ্লোমেট্রি পরীক্ষা (প্রস্রাবের গতিমাপক যন্ত্র)
* বিশেষ ধরনের এক্স-রে দিয়ে মূত্রনালি ও মূত্রথলি পরীক্ষা।
চিকিৎসা
রোগ নির্ণয় সহজ হলেও এ রোগের চিকিৎসা সহজ নয়। অনভিজ্ঞ হাতে এই চিকিৎসার জন্য চিরতরে মূত্রনালি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
ইউরোথ্রোটমি
* মহিলাদের ক্ষেত্রে যন্ত্র দিয়ে মূত্রপথ বড় করা হয়। একে অটিস ইউরেথ্রমি বলে।
* যন্ত্র দিয়ে পুরুষ মানুষের মূত্রপথও বড় করা যায়। তবে দুই থেকে তিন মাস পর এই অসুখ আবার ফিরে আসতে পারে।
ইউরেথ্রোপ্লাস্টি
* এটি সংবেদনশীল শল্য চিকিৎসা। অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ ইউরোলজিস্টের মাধ্যমে এই অপারেশন করা উচিত। ভালোভাবে অপারেশন করলে তার ফল খুবই ভালো। কিন্তু একবার অপারেশন অকৃতকার্য হলে পরবর্তী সময় তা আরো জটিলভাবে দেখা দেয় এবং চিকিৎসাও কঠিন হয়ে পড়ে।
* এন্টিরিয়র স্ট্রিকচার বা মূত্রপথের সামনের অংশ মুখগহ্বরের আবরণ দিয়ে সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। ওএমজি- ইউরেথ্রোপ্লাস্টি বর্তমানে আমাদের দেশে ভালোভাবেই সম্পন্ন করা হচ্ছে। এর ফলাফল উন্নত দেশের ফলাফল থেকে কোনো অংশেই কম নয়।
* বালবার ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচারের শল্য চিকিৎসার নাম এনাস্টমটিক ইউরেথ্রোপ্লাস্টি। সরু অংশ কেটে ফেলে মূত্রপথের স্বাভাবিক অংশ মুখোমুখি জোড়া দেওয়া হয়।
উপদেশ
এ রোগের চিকিৎসা অবশ্যই জরুরিভাবে করা প্রয়োজন। নতুবা কিডনি বিকল হওয়ার মতো জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
Comments are closed