মূত্রথলীর পাথর (Cystolitholapaxy)
বিভিন্ন কারণে মূত্রথলিতে পাথর হতে পারে। কিডনি থেকে মূত্রথলি পর্যন্ত যেকোনো স্থানে জীবাণু দ্বারা সংক্রমণ হলে পাথর হতে পারে। দেখা গেছে অনেক কারণের সমন্বয়ে পাথর সৃষ্টি হয়। তবে মূল কথা হলো, শরীরের বিভিন্ন অসুখে এবং খাবারের উপাদানের তারতম্যে রক্তের গঠনের মাঝে পরিবর্তন আসে। এর ফলে প্রস্রাবের নিষ্কাশিত বা বেরিয়ে যাওয়া পদার্থেরও তারতম্য হয়। পরিবর্তনের ফলে ধীরে ধীরে প্রস্রাবের বেরিয়ে যাওয়া অতিরিক্ত উপাদানের দানা তৈরি হয়, আর সেই দানা এক সময় পাথরে রূপান্তরিত হয়।
দুইভাগে ভাগ করা হয় মূত্রথলির পাথরকে ১. প্রাইমারি, ২.সেকেন্ডারি।
মূত্রথলির প্রাইমারি পাথর বলতে সেই পাথরকে বোঝায় যা জীবাণুমুক্ত প্রস্রাবে তৈরি হয়। এটা সচরাচর কিডনিতে উৎপন্ন হয় এবং বৃক্কনালি পথে মূত্রথলিতে চলে এসে সেখানেই আকারে বৃদ্ধি পায়।
বিভিন্ন কারণে ঘটে থাকে মূত্রথলির সেকেন্ডারি পাথর । যেমন সংক্রমণ, মূত্রথলিতে প্রতিবন্ধকতা, মূত্রথলি খালি হতে বাধা অথবা মূত্রথলিতে বাইরের কোনো বস্তুর উপস্থিতি, যেমন গলে যায় না এমন সুতা, ধাতব তার অথবা ক্যাথেটারের টুকরা।
পাথরের উপাদান
বিভিন্ন ধরনের পদার্থ দিয়ে পাথর উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে রয়েছে অক্সালেট, ইউরিক এসিড ও ইউরেট, সিসটিন, অ্যামোনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম ফসফেট ইত্যাদি।
উপসর্গ
মহিলাদের চেয়ে পুরুষরা আট গুণ বেশি আক্রান্ত হন। এটা উপসর্গবিহীন থাকতে পারে। অন্য কোনো কারণে সিস্টোসকপি বা তলপেটের এক্স-রে অথবা আল্ট্রাসনোগ্রাম করানোর সময় হঠাৎ করে ধরা পড়তে পারে। তবে মূত্রথলির পাথরে বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন দিনের বেলা ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া। মূত্রথলি সম্পূর্ণ খালি না হওয়ার অনুভূতি হওয়া।
সাধারণত প্রস্রাবের শেষে ব্যথা অনুভূত হওয়া। নড়াচড়া করলে ব্যথা বেড়ে যাওয়া।
প্রস্রাবের সাথে অথবা প্রস্রাবের শেষে ফোঁটা ফোঁটা তাজা রক্ত পড়া।
প্রস্রাব করার সময় প্রস্রাবের ধারা মাঝে মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া।
হঠাৎ করে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া।
পরীক্ষা নিরীক্ষা
প্রস্রাব পরীক্ষা।
এক্স-রে কেইউবি।
সিস্টোস্কপি।
চিকিৎসা
অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে পাথর হওয়ার প্রকৃত কারণ বের করে তারপর চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। রোগীর মূত্রথলিতে প্রতিবন্ধকতা এবং সেই সাথে সংক্রমণ আছে কি না তা দেখতে হবে। রোগীর মূত্রথলিতে স্নায়ুজনিত অস্বাভাবিকতা রয়েছে কি না তাও দেখতে হবে।
মূত্রথলির পাথর অপারেশনের মাধ্যমে বের করে আনা হয় এবং যে কারণে পাথর হয়েছিল তার চিকিৎসা দেয়া হয়। এই অপারেশনকে সিস্টোলিথোটমি বলে। বর্তমানে বেশিরভাগ রোগীকে এনডোস্কপির মাধ্যমে পাথর বের করে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়াও যন্ত্রের সাহায্যে পাথর ভেঙে বের করার পদ্ধতিও রয়েছে যেমন লিথোলাপ্যাক্সি।
মূত্রথলিতে পাথর হওয়ার লক্ষণ আমাদের শরীরের যে কোন অঙ্গে যেকোনো ধরনের সমস্যা হতে পারে এবং এই সমস্যার সমাধান করা আমাদের দায়িত্ব। আল্লাহ তাআলা আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং আমাদের পরীক্ষা করার জন্য আমাদের জন্য রোগ বালাই সৃষ্টি করেছেন। তিনি পবিত্র কোরআনে এটা উল্লেখ করে দিয়েছেন যে আমাদের সেই রোগ বালাই ভালো করার জন্য চেষ্টা করতে হবে এবং আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা রাখতে হবে। আমরা যদি এই চেষ্টাটা করি তাহলে অবশ্যই সুস্থ হতে পারবো। আজকে আমরা কথা বলছি মূত্রথলির পাথর নিয়ে যেটা অত্যন্ত সাংঘাতিক রোগ ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রে। তবে এই রোগের ক্ষেত্রে ছেলেরা এগিয়ে আছে অর্থাৎ মূত্রথলির পাথর হয় ছেলেদের বেশি মেয়েদের কম। পুত্রথলির পাথর হলে কিভাবে বোঝা যাবে সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি প্রাথমিক অবস্থাতে এটা বুঝতে না পারেন তাহলে সেটা আপনার দুর্বলতা তবে অবশ্যই বুঝতে হবে কেন এটা হয়েছে সে সম্পর্কে নিজে আলোচনা করা হচ্ছে। কিভাবে বুঝবেন মূত্রথলিতে পাথর হয়েছে যাদের সাধারণত মূত্রথলিতে পাথর হয় তাদের প্রস্রাবের নানা ধরনের সমস্যা হয়। এখানে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হতে পারে প্রাথমিক লক্ষণ এবং প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সঙ্গে প্রস্রাবের অতিরিক্ত দুর্গন্ধ মূত্রথলির পাথরের একটি লক্ষণ। এছাড়াও তলপেটে অত্যাধিক যন্ত্রণা এবং ব্যথা অনুভূত হতে পারে এটাও মূত্রথলিতে পাথর হওয়ার একটি পূর্ব লক্ষণ। একটি বিষয় আপনাদের জানিয়ে রাখি দু-একটা লক্ষণ সাধারণত একটি রোগকে নির্দেশ করে না একই সঙ্গে চার থেকে পাঁচটি লক্ষণ যখন ধরা পড়ে তখনই মূলত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এই রোগগুলোর বিষয়। মূত্রথলির পাথরের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ সেটা হচ্ছে প্রস্রাবের বেগ কমে যাওয়া এবং ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ আসার পরেও চাপের তুলনায় প্রস্রাব কম হওয়া। এই অবস্থাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে রোগীকে এই বিষয়গুলো বোঝা। এটা যত তাড়াতাড়ি রোগী বুঝতে পারবে তত ভালো তার কারণ হচ্ছে এই পাথরগুলো যদি আগের দিকে ধরা পড়ে তাহলে সেগুলো ওষুধের মাধ্যমে নষ্ট করা যায় মুত্র থলিতে পাথর হলে করণীয় যদি কারো মূত্রথলির পাথরে ধরা পড়ে তাহলে অবশ্যই সেটা দুশ্চিন্তার কারণ তবে এই অবস্থাতে মানসিক শক্তি যে ধরে রাখতে পারে সেই যেতে পারে। প্রাথমিক অবস্থাতে মূত্রথলিতে যদি পাথর ধরা পড়ে তাহলে সেটা খুব ছোট অবস্থাতে থাকে এবং এই অবস্থাতে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ১০০ পার্সেন্ট। যদি পাথর এর আকৃতি বড় হও তাও কোন সমস্যা নেই তাও সুস্থ হওয়া যাবে তাই এখানে এমন কোন ভয়ের কোন কারণ নেই। তবে সবার প্রথমে আপনাকে একজন ইউরোলজিস্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গিয়ে দেখাতে হবে এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে পাথরের অবস্থান কোথায় এবং পাথরের সাইজ কত বড়। সাইজ ছোট থাকলে চিকিৎসকের অবশ্যই কিছু ঔষধ দেবেন এবং কিছু খেলাধুলা করতে বলবেন এবং নিয়মিত পরিমাণ মাথায় পানি খেতে বলবেন এর মাধ্যমে সেগুলো বেরিয়ে যেতে পারে। তবে যদি পাথরের সাইজ অনেক বড় থাকে তাহলে সেই ক্ষেত্রে সবথেকে বড় উপায় হচ্ছে অপারেশন করা। ভয় করার কিছু নেই বর্তমানে ল্যাপারোস্কপি সার্জারির মাধ্যমে পেটে সাধারণত তিনটি ফুটা করে সেখান থেকেই মূত্রথলির পাথর অপসারণ করানো হচ্ছে। এই অপারেশনের খরচ ততটাও ব্যয়বহুল নাই সাধারণ মানুষের পক্ষেও এটা করা সহজ তাই দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। মূত্রথলির পাথর চিকিৎসা মুত্র থলিতে পাথর হলে প্রথমে চিকিৎসা নিতে হবে ওষুধের মাধ্যমে সেটাকে ভালো করার। যদি সম্ভব না হয় তাহলে যে কাজটি আপনি করতে পারেন সেটা হচ্ছে অপারেশন করিয়ে নেন।
Comments are closed